ভারতে পিকে হালদারের বিপুল সম্পত্তি, বাড়ি আছে ২০টি

অনলাইন ডেস্ক
১৪ মে ২০২২, রাত ২:০১ সময়

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৯টি স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়েছে ভারতের অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। তারা কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

পিকে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার মৃধা। পিকে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমার মৃধাকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে। দুদক তাকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। 

কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ভারতের ইডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মৃধাকে তারা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। পিকে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দু'জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবির বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ভারতী পল্লি এলাকার পাশে নবজীবন পল্লিতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করত।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তদন্তে জানা যায়, এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এর মধ্যে শুক্রবার শুধু অশোকনগরেই তিন বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হালদার।

সঞ্জীব জানান, প্রায় দুই বছর আগে শেষবার সুকুমার মৃধা অশোকনগরের এই বাড়িতে এসেছিলেন। মৃধার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা শুনেছি। তবে স্পষ্টভাবে কিছু জানি না।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সঞ্জীব হালদার নিজেও বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি সুকুমার মৃধার যে বাড়িতে থাকছিলেন, সেটি মূলত পিকে হালদারের ভাই এনআরবিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রীতিশ হালদারের। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রাণেশ হালদার নামে পরিচিত ছিলেন। তিন থেকে চার বছর আগে প্রীতিশ হালদার তার বাড়িটি সুকুমার মৃধার নামে হস্তান্তর করেন।

পিকে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযোন চালিয়েছে ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে বলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আটক করে ইডি।

অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় পিকে হালদার চক্রের একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। এখন পর্যন্ত অশোকনগরে শুধু একটি বিলাসবহুল বাড়িতে সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার স্বামী সঞ্জীবকে পাওয়া গেছে। অন্যগুলো ফাঁকা ছিল। সঞ্জীবকে জেরা করছে ইডি। এ ছাড়া পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার এবং তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা শুরু করেছে ইডি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রণব কুমার হালদার ছিলেন সরকারি কর্মচারী। তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এবং ছোট ছেলে মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত। আয় ও সম্পত্তি সঙ্গতিহীন হওয়ায় তারাও ইডির নজরে রয়েছেন। তাদের চার বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়িটি সব সময় এলাকাসীর মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। পিকে হালদারের পাচার করা টাকা 'হাওলা'র মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে ইডি ধারণা করছে।

কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বাই ও ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে হালদার-মৃধা জুটির বিনিয়োগ রয়েছে বলে অনুমান করছে ইডি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশি হয়েও হালদার-মৃধা জুটির ভারতে প্রভাবের অন্যতম বড় কারণ ছিল স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।

শুক্রবার সকাল ৮টায় সুকুকামার মৃধার বাড়িয়ে তল্লাশি শুরু করে ইডি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অর্থ পাচার আইনের আওতায় বাড়িটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরপর ইডির দল যায় অশোকনগরের একটি ব্যাংকের শাখায়। সূত্র জানায়, এই ব্যাংকের মাধ্যমেই একাধিক সম্পত্তির লেনদেন করেছিলেন হালদার-মৃধা।

ভারতে ৫০ হাজার রুপির বেশি জমা করতে গেলে অর্থের উৎস জানানো বাধ্যতামূলক, সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনার জন্য কীভাবে ব্যাংকে লেনদেন করা হলো, তা জানার চেষ্টা করছে ইডি। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নামে-বেনামে পিকে হালদারের কোনো অর্থ আছে কিনা তাও জানার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।

গত বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গুরোগী পাঁচগুণ বেশি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আওয়াজবিডি ডেস্ক
২৯ মে ২০২৩, বিকাল ৬:১৫ সময়

মন্ত্রী বলেন, দেশে এবং আশপাশের দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জানুয়ারি থেকে ২৮শে মে পর্যন্ত ১ হাজার ৭০৪ জন ডেঙ্গুরোগী পেয়েছি। এসময়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা যদি গত বছরের তুলনা করি, এবছর রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ। অর্থাৎ অনেক রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডেঙ্গু রোধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে ডিজির (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) বৈঠক হয়েছে, হাসপাতালে যেন প্রস্তুতি থাকে।

আমাদের ডাক্তার-নার্সদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ডেঙ্গু সার্ভে, সেটি চলমান। রিপোর্ট দুই সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি। মন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে যেহেতু রোগী বাড়ছে, সেহেতু এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ডেঙ্গুরোগীদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড এবং আলাদা কর্নার তৈরি করা হয়েছে। বছরখানেকের মধ্যে আমরা আড়াই হাজার ডাক্তার এবং নার্সকে ট্রেনিং দিয়েছি।

তিনি বলেন, জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা বিভিন্ন মহলকে যুক্ত করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আছেন, ছাত্রছাত্রী আছেন, তাদের মাধ্যমে এটা প্রচার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও যুক্ত করা হয়েছে, যারা জনগণকে সতর্ক করতে পারে, কীভাবে ডেঙ্গুরোগ থেকে বাঁচা যায়, মশার কামড় থেকে বাঁচা যায় এবং ডেঙ্গু হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া, এ বিষয়েও বলা।

এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার জন্য পোস্টার, ব্যানার এবং টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান জাহিদ মালেক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিটিং আহ্বান করেছিল। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি গেছে। জরুরি কোনো ব্যবস্থা যদি নিতে হয়, সেজন্য প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমরা জনগণকে অবহিত করতে চাই যে, আপনারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন। মানে বাসার আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার রাখুন, নিজের ঘর স্প্রে করুন, আশপাশে যদি জঙ্গল থাকে সেখানে স্প্রে করুন এবং পানি বা যদি অন্যকিছু জমে থাকে সেগুলো সরিয়ে ফেলুন। এ কাজগুলো আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে এসে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেবেন। সময় মতো চিকিৎসা নিলে প্রায় সবাই ভালো হয়ে যাচ্ছেন।

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ছড়ানোর আশঙ্কা নেই: এদিকে  সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্প্রতি বাড়লেও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন । দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে সব বিধিনিষেধও উঠে গেছে, নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি জেনেভা থেকে এসেছি। সেখানে দেখলাম একটি লোকও মাস্ক পরেনি। সেখানে যে রোগী হচ্ছে না দু-একটা করে তা নয়। আমাদের এখানেও দু-একটি করে রোগী পাচ্ছি। ইদানিং কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে তেমন কোনো রোগী নেই। যেহেতু সবাই টিকা নিয়েছে সেজন্য মারাত্মক আকার ধারণ করছে না করোনা।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলবো, করোনা যেহেতু আছে আমাদের সতর্ক থাকাটা ভালো। যেখানে বেশি লোকের সমাগম হয় সেখানে মাস্ক পরতে পারলে ভালো। করোনা মোকাবিলার জন্য যে অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করেছি, সেগুলো আমাদের মনে রাখা উচিত। কারণ যে কোনো সময় বাড়তেও পারে অতিরিক্ত, এখন সেরকম কোনো আশঙ্কা আমরা পাচ্ছি না।